সিলেট প্রতিনিধিঃ শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে দার বাড়িতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে রাজনের বাড়িতে যান তিনি।
রাজনের ছোট ভাই সাজনের লেখাপড়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাসও প্রদান করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ছাড়াও সিলেটের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় দেয়া বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রাজন হত্যার বিচার দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেই করা হবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রণালয়ে আবেদনের নির্দেশ দেন। এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো সংশয় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাই তারা তাকে ফেরত দেবে।
রাজন হত্যাকাণ্ডকে হৃদয়বিদারক ও নৃশংস বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, এমন হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। আর বিচারকার্য যাতে বিলম্বিত না হয় সেজন্য তা দ্রুত বিচারের মাধ্যমেই করা হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা অনুমোদন করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে।
রাজন হত্যার ঘটনা সমগ্র বিশ্বকে কাঁপিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুধু দেশেই আলোচিত হয়নি, সারা পৃথিবীরও নজর কেড়েছে। যারা রাজনকে পিটিয়েছে, তারাই ভিডিও ধারণ করে উল্লাস প্রকাশ করেছে। অথচ একবারও ভাবেনি, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিণতি কি হবে! এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নিজে খোঁজ খবর রাখছেন বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাজনের খুনিদের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেলে তাদেরকেও কোনো ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার পেছনে কারও গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে তাকে সেখানে আটক করা হয়েছে।
গত ৮ জুলাই সকালে চুরির অপবাদ দিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে হত্যা করা হয়। শিশু রাজনকে পেটানোর ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে নির্যাতনকারীরাই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওচিত্র দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
এ মামলায় এ পর্যন্ত সৌদি আরবে আটক কামরুল ছাড়াও এক নারীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে প্রধান আসামি মুহিত আলম, চৌকিদার ময়না, চা দোকানি দুলাল ও নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে সাতদিনের রিমান্ডে রয়েছেন মুহিত-কামরুলের ভাই আলী হায়দার ও আবলুস।